হযরত ইব্রাহিম (আ.)—তাওহিদের পুরোধা, নবুওতের এক উজ্জ্বল প্রদীপ

???? : হযরত ইব্রাহিম (আ.)—তাওহিদের পুরোধা, নবুওতের এক উজ্জ্বল প্রদীপ
???? প্রকাশিত: ৩০ জুন, ২০২৫ ✍️ রিপোর্টার: ইসলামী ইতিহাস বিভাগ ---
???? ভূমিকা:
হযরত ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁকে বলা হয় “আবু আল-আম্বিয়া”, অর্থাৎ নবীদের পিতা। ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিম—এই তিনটি ধর্মেই তিনি অত্যন্ত সম্মানিত। কুরআন ও বাইবেলের অসংখ্য আয়াতে তাঁর জীবন ও ত্যাগের কথা বর্ণিত হয়েছে। আজ আমরা তুলে ধরছি তাঁর পূর্ণাঙ্গ জীবনকাহিনী—জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। ---
???? জন্ম ও বংশ পরিচয়:
হযরত ইব্রাহিম (আ.) জন্মগ্রহণ করেন প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, বর্তমান ইরাকের বাবিল (বা বাবেল) নগরীতে, যা সে সময় 'উর' (Ur of the Chaldees) নামে পরিচিত ছিল। তাঁর পিতার নাম ছিল আযার (বা তেরাহ), যিনি মূর্তি নির্মাতা ও পৌত্তলিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলেন। ---
???? শৈশবেই যুক্তিবাদ ও ঈমান:
ইব্রাহিম (আ.) শৈশবেই চিন্তা করতেন—সূর্য, চাঁদ, তারা কি ঈশ্বর হতে পারে? কিন্তু প্রত্যেকেরই অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী। ফলে তিনি বুঝে যান, এগুলো কখনোই প্রভু হতে পারে না। তিনি একমাত্র আল্লাহর অস্তিত্ব উপলব্ধি করেন এবং তাওহিদের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। ---
???? মূর্তিভাঙার প্রতিবাদ ও আগুনে নিক্ষেপ:
নিজ জাতিকে বুঝাতে গিয়ে একদিন তিনি মন্দিরের সব মূর্তি ভেঙে দেন এবং বড় মূর্তির গলায় কুড়াল ঝুলিয়ে দেন। রাজা নমরুদ তাঁকে আগুনে নিক্ষেপের আদেশ দেয়। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা অগ্নিকে আদেশ করেন: "হে আগুন! তুমি ইব্রাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।" (সূরা আম্বিয়া: ৬৯) তিনি আগুন থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন, যা ছিল ঈমানের বিজয়। ---
???? দেশত্যাগ ও হিজরত:
নমরুদের অত্যাচারে তিনি স্ত্রী সারাহ ও ভাতিজা লূত (আ.)-কে নিয়ে ফিলিস্তিন, তারপর মিসরে হিজরত করেন। পরে আল্লাহর নির্দেশে দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে নিয়ে যান বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে। ---
???? কাবা নির্মাণ:
মক্কার বালুকাময় মরুভূমিতে ইসমাইল (আ.)-এর সঙ্গে কাবা শরিফ নির্মাণ করেন। আল্লাহর আদেশে বলেন: "হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের কাছ থেকে (এই কাজ) গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।" (সূরা বাকারা: ১২৭) ---
???? কুরবানির আদেশ: ইসমাইল (আ.) যখন কৈশোরে, তখন ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে দেখেন তিনি পুত্রকে কুরবানি করছেন। আল্লাহর আদেশে তিনি তাতে প্রস্তুত হন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আল্লাহ একটি দুম্বা পাঠিয়ে দেন, যা কুরবানি হয়। এই ঘটনার স্মরণেই আজও ঈদুল আযহায় কুরবানির প্রথা পালন করা হয়। ---
???? বার্ধক্য ও মৃত্যু:
হযরত ইব্রাহিম (আ.) দীর্ঘ ১৭৫ বছর বেঁচে ছিলেন বলে ইতিহাসবিদরা মত দেন। তিনি ফিলিস্তিনের হেবরন অঞ্চলে ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর স্ত্রী সারাহও সেখানে সমাহিত। ---
???? ইব্রাহিম (আ.)-
এর উত্তরাধিকার: তাঁর দুই পুত্র—ইসমাইল (আ.) ও ইসহাক (আ.)—উভয়েই নবী হন। ইসমাইল (আ.)-এর বংশধর থেকে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আগমন করেন। আর ইসহাক (আ.)-এর বংশধরদের মধ্যেই ছিলেন হযরত মূসা (আ.), ঈসা (আ.) প্রমুখ। ---
???? উপসংহার:
হযরত ইব্রাহিম (আ.) ছিলেন তাওহিদের মূর্ত প্রতীক, একনিষ্ঠ ঈমানদার এবং মানবজাতির জন্য এক আলোকবর্তিকা। কুরআনে আল্লাহ বলেন: "ইব্রাহিম ছিলেন একাকী জাতি (উম্মত)।" (সূরা নাহল: ১২০) তাঁর জীবন আজও বিশ্ববাসীর জন্য অনুপ্রেরণা ও ত্যাগের প্রতীক। ---
???? শেষ কথা:
আজকের বিশ্বে, যখন মানুষ বিভ্রান্তির অন্ধকারে, তখন হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর তাওহিদ, আত্মত্যাগ ও সত্যনিষ্ঠ জীবনের শিক্ষা অনুসরণই হতে পারে মুক্তির উপায়। ---